চুলের যত্ন

মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হলে করনীয়।

মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হলে করনীয়

শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম – বছরের প্রায় প্রতিটি মৌসুমেই ছেলে মেয়ে উভয়েই মাথায় খুশকি সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে শীতকালে এই সমস্যা বেশি প্রকট হয়। খুশকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই এটাকে হালকা ভাবে নেয় ,ফলে খুশকির সমস্যা বেড়ে গিয়ে অনেক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করে। চলুন খুশকি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

খুশকি

খুশকি হলো মাথার ত্বকের উপরের অংশে হওয়া এক ধরনের চামড়ার সমস্যা। এটি পরিবেশের অবস্থা , শারীরিক অবস্থা ও মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং তৈলাক্ততার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন-শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে, সাদা সাদা ফ্লাক্স আকারের খুশকি হয় ; গরমকালে কিংবা অন্যান্য মৌসুমে মাথার ত্বক যখন অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ (Malassezia নামের এক ধরনের ছত্রাক) হয় তখন মাথার ত্বকের কোষগুলোর অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি ঘটে ফলস্বরূপ, মাথার ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্লাক্স জমা হয়ে চুলকানি ও খুশকির সমস্যা তৈরি হয়।

dandruff

এছাড়াও, এলার্জিজনিত কারন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারনেও খুশকি হয়। খুশকি কোন মারাত্বক ইস্যু নয়, সঠিক পরিচর্যা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। চলুন মাথায় খুশকি হলে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কি কি পদক্ষেপ নিবেন।

১. চুল ও মাথার স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুন

মাথার ত্বকে অনেক বেশি তেল চিটচিটে ময়লা ও দূষন‌ জমা হয়ে থাকলে খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই মাথার ত্বক নিয়মিত আ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার রাখুন। বাইরের ধুলো -ময়লা ও দূষন‌ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করূন পাশাপাশি চুল একদম খোলা না রেখে হালকা ভাবে বেঁধে রাখুন।

খুশকি দূর করতে সপ্তাহে ২–৩ বার চুলের যত্নে ব্যবহার করূন –

২. তেল ব্যবহারে সতর্কতা

শীতকাল ও গরমকাল অনুযায়ী মাথায় তেলের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। কারন শীতকালে মাথার ত্বক অনেক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই এই সময়ে চুলের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক অনুপাতে তেল ব্যবহার করতে হবে বীপরীতে গরমকালে মাথার ত্বকে সেবাসিয়াস গ্লান্ড থেকে বেশি পরিমাণে তেল উৎপাদন হয় তাই এই সময়ে মাথায় তুলনামূলক কম তেল ব্যবহার করতে হবে। গরমের দিনে খুব বেশি তেল ব্যবহার করলে,মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস (ছত্রাক) বেড়ে যেতে পারে। তাই সপ্তাহে ১ বার মাথায় হালকা গরম নারিকেল বা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

৩. হোম রেমিডিস এপ্লাই

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিতে সবাই পছন্দ করে। কারন ঘরোয়া উপাদান ত্বকের কোন ক্ষতি করে না এবং সব ধরনের ত্বকের জন্যও সেইভ। চলুন খুশকি দূর করার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই।

অ্যালোভেরা ও টি ট্রি অয়েল:

একটি পাত্রে ৩ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ৩-৪ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে ২০–২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি মাথার ত্বকে অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে ও মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখে।

টক দই ও লেবু:

একটি বাটিতে ৩ টেবিল চামচ টক দই ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রনটি মাথার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এগুলো ব্যবহারে স্ক্যাল্পের ফাঙ্গাস দূর হয় ও চুল হয় নরম ও ঝলমলে।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও হাইড্রেশন মেইনটেইন করুন

নিয়মিত খাদ্য তালিকায় জিঙ্ক ,ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: বাদাম, মাছ) ইত্যাদি প্রোভাইড করুন এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।

৫. কেমিক্যাল পণ্য কম ব্যবহার করুন

চুল সেট রাখতে অনেকেই নিয়মিত জেল ও হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করে। যা চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো বেশি ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পে জমে খুশকির সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই খুশকির সমস্যা থাকাকালীন কেমিক্যাল হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।

এইতো জেনে নিলাম খুশকি দূর করার কিছু উপায় সম্পর্কে। খুশকি হলে জামায় কিংবা কাঁধে সাদা সাদা ক্ষুদ্র খুশকি পড়ে থাকে এছাড়াও মাথার ত্বকে চুলকানি ও লালচে ভাব হয় যা অনেক সময় আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে। তাই সব সময় নিজেকে প্রাণবন্ত ও দ্বিধামুক্ত রাখতে খুশকি দূর করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আপনিও পারবেন খুশকি মুক্ত থাকতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *