ঋতু ভেদে ত্বকের যত্ন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নিতে হবে । শীতকালের ত্বকের যত্ন এবং গরমকালের ত্বকের যত্নে ভিন্নতা রয়েছে। তাই গরম কালে ত্বকের যত্ন শীতের সময়ের মত করে যত্ন নিলে হবে না।
গরমকালে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমাদের ত্বক থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম নির্গত হয়। ফলে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় , মুখমণ্ডল ঘামে ভিজে তৈলাক্ত হয়ে যায় ।
তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে বিশেষ করে গরমকালে তাদের ত্বকের যত্ন করতেই হবে। তাই শীতকালের তুলনায় গরমে ত্বক ভালো রাখতে প্রয়োজন বাড়তি পরিচর্যা।
এই গরমে ত্বক ভালো রাখতে চাইলে মেনে চলতে হবে কিছু কাজ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরমকালে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন।
ফেসওয়াশ / ক্লিনজার ব্যবহার
ত্বক ব্রণ মুক্ত ,সুন্দর ,স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার না করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে।
তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মুখ পরিষ্কার করুন। ত্বক পরিষ্কার করতে মাইল্ড ক্লিনজার ব্যবহার করুন। অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার ব্যবহার করবেন।
টোনার ব্যবহার
টোনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করে ত্বককে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যজ্জল রাখে। ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করার পর টোনার ব্যবহার করুন।
গরমে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখতে টোনার কাজ করে। আমরা অনেকেই টোনারের ব্যবহার জানি না। একটি কটন পেডে টোনার নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ক্রিম বা সিরাম ব্যবহার
ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের জেল্লা ধরে রাখে। তাই নিয়মিত ভিটামিন সি সিরাম ত্বকে ব্যবহার করবেন।
ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং অবশ্যই ভিটামিন সি সিরাম লাগানোর পর রোদে বের হবেন না এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
সানস্ক্রিনের ব্যবহার
সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্নি আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। এই আলট্রাভায়োলেট রশ্নি থেকে ত্বক রক্ষা করতে অর্থাৎ ত্বককে সানবার্ন থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়।
সানস্ক্রিন হলো ত্বকের জন্য ফটোপ্রটেক্টিভ টপিকেল ধরনের পণ্য। এটি ত্বক রোদে পোড়া ভাব থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রোদের তীব্র তাপ থেকে বাঁচতে বাইরে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই হাত ,পা , মুখ ও শরীরের অন্যান্য খোলা অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। কারণ এটি আপনার ত্বককে রোদের তীব্র তাপের হাত থেকে রক্ষা করবে।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
আমরা অনেকেই মনে করি শুধু শীতকালেই ত্বকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয় কিন্তু এটা একদমই ঠিক না। সারা বছরই ত্বকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়।
গরমে বাতাসের আদ্রতা বেশি হওয়ায় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নির্গত হয় ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় । তাই ত্বক প্রাণবন্ত করতে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
দিনের বেলায় আপনি সানস্ক্রিন ব্যবহার করার ফলে মশ্চারাইজার নাও ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু অবশ্যই রাতে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। গরমে জেল বেসড ,পানি বেসড জাতীয় ময়শ্চারাইজার ত্বকে ব্যবহার করবেন।
গরমে মেকআপের ধরন
এই প্রচন্ড গরমে ত্বকে মেকাপ কম করাই ভালো। তবুও কাজের জন্য যাদের মেকআপ করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম অবলম্বন করে মেকআপ করলে ত্বক ভালো রাখা যায় এবং মেকআপ দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়, গলে যায় না।
প্রথমে ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে টোনার ব্যবহার করার পর ত্বকে মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। গরমে ভারী মেকআপ না করে হালকা অর্থাৎ গ্লোয়িং বেসড মেকআপ করা ভাল।
ওয়াটার প্রুফ আইলাইনার ,মাশকারা, মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করলে গরমে ত্বক তৈলাক্ত হলে বা ঘামলে তা ছড়িয়ে যাবে না। গরমে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায় যার ফলে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি।
তাই কাজ শেষে অবশ্যই মেকআপ ভালোভাবে তুলে নিতে হবে। সবশেষে মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে।
আরো জানুন, গরমে মেকআপ ঠিক রাখার উপায়।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
গরমে ঘাম আকারে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় ।তাই স্বাভাবিকের চেয়ে গরমে পানি পান করতে হবে বেশি। একজন মানুষের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করতে হয়।
গরমে সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি কারণ এ সময় মানুষ গরমের দাবদাহে তৃষ্ণার্ত হয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অধিক ঠান্ডা পানি পান করে। ফলে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়।
তাই গরমে ঘরের তাপমাত্রায় পানি পান করা ভালো। গরমে আমাদের শরীরে দূষিত পদার্থ জমা হয় । তাই বেশি বেশি পানি পান করলে দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে ভেতর থেকে ত্বক পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল হবে।
ফলমূল শাকসবজি খাওয়া
গরমকালে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল এবং শাকসবজি পাওয়া যায়। তাই বেশি বেশি ফল খাবেন এতে করে ফলে থাকা ভিটামিন শরীরের অনেক উপকারে আসবে এবং শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখবে ফলে ত্বক ভালো থাকবে।
খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি রাখবেন। গরমে জলভিত্তিক ফল এবং শাকসবজি খেলে ত্বক হাইড্রেটেট রাখা যায়।