চুলের যত্ন

চুলের যত্ন নেওয়ার সেরা সব উপায়- ১৫ টিপস।

hair care

প্রচন্ড গরমে সবাই ঘেমে একাকার হয়ে যায়, যার ফলে চুল চিটচিটে এবং অয়েলি হয়ে যায়। চুল চিটচিটে এবং অয়েলি হওয়ার কারণে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, যেমন চুলের ত্বকে খুশকি, ফুসকুড়ি, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া ,চুলের গোড়া নরম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

নারীর শোভা তার চুলে। নারীর সৌন্দর্যের অর্ধেক তার চুলের উপরে নির্ভর করে। চুল যদি হয় মনের মত তাহলে যে কোন স্টাইল করতে পারবেন নিমিষেই। তাই চুলের যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে।

গরমের দাবদাহে বাতাসে থাকা দূষিত পদার্থ, ধুলোবালি চুলকে করে রুক্ষ এবং প্রাণহীন। তাই ছেলে মেয়ে উভয়কেই চুলের যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে।

সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার চুল হবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল । আসুন জেনে নেওয়া যাক চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখার কিছু উপায়।

ধুলোবালি থেকে চুলকে রক্ষা করা

কর্মজীবী মেয়েদের ক্ষেত্রে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় তাই যতটা সম্ভব বাইরের ধুলোবালি থেকে চুলকে রক্ষা করতে চুল বাইরে খোলা না রেখে বেঁধে রাখার চেষ্টা করি।

চুল পরিষ্কারে ঠান্ডা পানি ব্যবাহার

চুল পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সব সময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা উচিত। ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথার স্কেল্প পরিষ্কার করবেন। গরম পানি চুলের জন্য ক্ষতিকর।

গরম পানি চুলের প্রাকৃতিক আদ্রতা নষ্ট করে , ফলে চুলের চকচকে ভাব হারিয়ে যায়, চুল হয়ে যায় রুক্ষ , চুল পড়া বৃদ্ধি করে। তাই গরম পানি চুলে ব্যবহার করবেন না।

শ্যাম্পুর পূর্বে তেল মাখিয়ে নেওয়া

প্রাণহীন রুক্ষ চুলের ক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার এক ঘণ্টা আগে চুলে তেল মাখিয়ে নিবেন। এতে চুলের আদ্রতা বজায় থাকবে, চুল চকচকে এবং মসৃণ হবে।

চুলে শ্যাম্পু করার সময়ে ভালো করে স্কেল্পে শ্যাম্পু মাসাজ করে চুল ধুয়ে ফেলুন।

শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক মাত্রা

চুলের ধরন অনুযায়ী চুলে শ্যাম্পু করতে হয়। যদি আপনার চুল হয় রুক্ষ তাহলে সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করলেই হবে। চুল যদি হয় অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত তাহলে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু করবেন।

শ্যাম্পু ব্যবহার
শ্যাম্পু ব্যবহার

চুল অতিরিক্ত পরিমাণে পাতলা এবং সরু হলে একদিন পরপর শ্যাম্পু করবেন। শ্যাম্পু করার আগে অবশ্যই চুলে তেল মাখিয়ে নিবেন।

সাধারণত সপ্তাহে দুইবার শ্যাম্পু করলে চুল ভালো থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে ,প্রতিদিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার না করাই ভালো ।এতে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়, চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই চুলের ধরন অনুযায়ী চুলে শ্যাম্পু করবেন।

চুলে তেল ব্যবহার করা

চুলে তেল ব্যবহার করলে চুল স্বাস্থ্যজ্জল হয়, খুশকি প্রতিরোধ হয়। নিয়মিত চুলে তেল ব্যবহারের ফলে চুল ঘন ও স্বাস্থ্যজ্জল দেখায়, চুল কম ছিঁড়ে। নারিকেল তেল চুলে প্রোটিন যোগায়।

বিভিন্ন ধরনের অর্গান অয়েল চুলে ব্যবহার করতে পারেন যেমন- অলিভ অয়েল, তিলের তেল, মেথি মিশ্রিত তেল, আমলকির তেল, টি ট্রি অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল চুলে জাদুর মত কাজ করে চুল পড়া কমায় এবং চুল গজাতে সাহায্য করে।

ভেজা চুল বেঁধে না রাখা

প্রচন্ড গরমে চুল ঘেমে গেলে, চুল ভেজা থাকলে প্রথমেই চুল শুকিয়ে নিবেন। ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। এতে চুলে দুর্গন্ধ হয় , উকুন হয় এবং চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় যেমন – খুশকি, মাথার স্কেল্প চুলকানো ইত্যাদি।

চুলে অ্যালোভেরা প্যাক ব্যবহার

গরমে চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে আ্যলোভেরার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আ্যলোভেরার প্যাক ব্যবহারের পূর্বে চুল শ্যাম্পু করে নিবেন। আ্যলোভেরা এবং নারকেল তেল মিশ্রিত প্যাকটি ভেজা চুলে এবং মাথার স্কেল্পে লাগিয়ে রাখুন।

কয়েক মিনিট প্যাকটি চুলে রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুলে আ্যলোভেরা ব্যবহারের ফলে চুল সিল্কি হয়। এছাড়াও আ্যলোভেরা ,মেথি, ক্যাস্টর অয়েল মিশ্রিত করেও হেয়ার প্যাক বানানো যায়।

চুল নরম ও মসৃণ রাখার হেয়ার প্যাক

নরম এবং মসৃণ চুলের জন্য মিষ্টি কুমড়া পেস্ট করে , মধুর সাথে চুলে লাগিয়ে নিবেন। এতে চুল নরম এবং মসৃণ হবে। প্যাকটি ব্যবহারের পর অবশ্যই নার্সিং শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

আ্যলোভেরার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হেয়ার প্যাক

চুলের আগা ফাটা রোধ করতে ব্যবহার করতে পারেন দুই চামচ অলিভ অয়েল, দুইটা ডিমের কুসুম, পরিমাণ মতো আ্যলোভেরা জেল ইত্যাদি মিশ্রিত প্যাকটি সপ্তাহে দুইবার চুলে লাগাবেন। এতে চুলের আগা ফাটা রোধ হবে এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জল দেখাবে।

আ্যলোভেরা চুলে এন্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। আ্যলোভেরার বিভিন্ন প্যাক ব্যবহারের ফলে চুলের স্কেল্প ভালো থাকে এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জল থাকে।

চুল পড়া রোধে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার

যাদের চুল পড়ার সমস্যা বেড়েই চলেছে। চুল দিন দিন পাতলা হয়ে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে টক দই এর হেয়ার মাস্ক খুবই উপকারী।

চুল পড়া
চুল পড়া

এক্ষেত্রে তিন চামচ টক দই, দুই চামচ আ্যলোভেরা জেল, দুই চামচ অলিভ অয়েল, এক চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক গোসলের পূর্বে চুলে লাগিয়ে নিন। ঘন্টা খানেক চুলে রেখে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং সঠিকভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

চুলে কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম

কন্ডিশনারের সঠিক ব্যবহার জানা অত্যন্ত জরুরী। কন্ডিশনার চুলকে মসৃণ করে এবং জটমুক্ত রাখে। শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে মাথার স্কেল্প থেকে কয়েক সেন্টিমিটার উপর থেকে চুলের গোরা পর্যন্ত চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন। অবশ্যই মাথার স্ক্যাল্পে কন্ডিশনার লাগাবেন না।

গরমে চুলের যত্ন

হেয়ার ড্রায়ার পরিহার করা

গরমে চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার পরিহার করুন। হেয়ার ড্রায়ারে থাকে গরম বাতাস ।তাই ঘামে ভেজা চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না ,এতে চুলের আগা ফেটে যায়।

চুল হালকা করে বাধা

চুল টাইট করে বাধবেন না। চুল টাইট করে বাধলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় ফলে চুল পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। তাই গরমে আটসাট করে চুল বাঁধবেন না। চুল ক্লিপ দিয়ে হালকা করে বেঁধে রাখবেন।

ছাতা ও স্কার্ফ ব্যবহার করা

বাইরে বের হওয়ার সময় রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে ছাতা ব্যবহার করুন। বাইরের ধুলোবালি ও দূষণ থেকে চুলকে রক্ষা করতে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।

হাইড্রেটিং হেয়ার মিস্ট ব্যবহার

চুলে ব্যবহার করতে পারেন হাইড্রেটিং হেয়ার মিস্ট। এটি ব্যবহারের ফলে চুল হয় নার্সিং এবং জটমুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *