ত্বকের যত্নের জন্য বিউটি ওয়ার্ল্ডে নিত্য নতুন ইনগ্রিডিয়েন্ট যোগ হচ্ছে। ত্বকের যত্নে এমনই এক কার্যকর ইনগ্রিডিয়েন্ট হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। ত্বকের যত্নে গ্লাইকোলিক এসিড কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর এবং অ্যান্টি এজিং ফর্মুলা বহন করে।
বর্তমানে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অনেক জনপ্রিয় একটি ইনগ্ৰিডিয়েন্ট। আজকে আমরা জানব ,স্কিন কেয়ারে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কেন এত জনপ্রিয় ? গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কি? ত্বকের যত্নে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এর বেনিফিটস কী? সে সম্পর্কে।
ত্বকের যত্নে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কেন এত জনপ্রিয়?
গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মলিকিউল অনেক ছোট আকারের ফলে এটি অনেক দ্রুত ত্বকে আ্যবজর্ব হয়। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বককে পরিষ্কার করে, ত্বকের ওপেন পোরসে জমে থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার করে এবং পোরস মিনিমাইজ করে।
এছাড়াও ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ করে, ব্ল্যাকহেডস হোয়াইটহেডস কমায়, ত্বকের মধ্যে কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায় , ত্বক উজ্জ্বল করে, ত্বক হাইড্রেট রাখে,সান টেন কমায়, হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়,কালো দাগ কমায় এবং ফাইন লাইনস দূর করে। তাইতো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের যত্নে এত জনপ্রিয় ।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কি?
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড হল এক ধরনের আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড পানিতে দ্রবণীয়। গ্লাইকলিক এসিড প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায়। প্রকৃতির উৎস-আখ, আনারস, কাঁচা আঙ্গুর এবং চিনির বিট থেকে গ্লাইকোলিক এসিড বিচ্ছিন্ন করা যায়।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে আমরা যত ধরনের আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড ব্যবহার করি তার মধ্যে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অনেক বেশি জনপ্রিয়।
গ্লাইকলিক অ্যাসিডের মলিকিউল অনেক ছোট আকারের ফলে এটি ত্বকের গভীরে খুব দ্রুত প্রবেশ করে এবং খুব দ্রুত ত্বকে অবজার্ভ হয় এবং ত্বককে এক্সফলিয়েট করে।
ত্বকে গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহারে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়-
বাজারে গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্লিনজার, টোনার , ফেইস মাস্ক, ময়শ্চারাইজার পাওয়া যায়। এই প্রোডাক্ট গুলোর মূল ইনগ্রিডিয়েন্ট হল গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এই প্রোডাক্টগুলোতে ৮-১০% গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ত্বকে গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহারে আমরা যেসব বেনিফিট পাব সে সম্পর্কে এখন আলোচনা করব।
১. ত্বক হাইড্রেট রাখে:
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেট রাখে। ত্বকের প্রয়োজন অনুসারে ত্বকে হাইড্রেশনের যোগান দেয় এবং স্কিন সফট ও মসৃন রাখে।
২. ত্বকের pH ব্যালেন্স ধরে রাখে:
গ্লাইকলিক এসিড উদ্ভিদ থেকে আসে। এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখে এবং ত্বকের pH ভারসাম্য বজায় রেখে ত্বককে স্মুথ এবং গ্লোয়িং করে।
৩. ত্বকের ডেড সেলস দূর করে:
গ্লাইকোলিক এসিডের মলিকিউলার অনেক ছোট আকারের তাই এটি স্কিনে খুব দ্রুত আবজর্ভ হয় এবং ত্বকের যে অংশে ডেড সেলস বন্ড থাকে সেই অংশের ডেড সেলস বন্ড ভেঙে দেয়। ফলে আমাদের স্কিনে থাকা ডেড সেলস স্মুথলি রিমুভ করা যায়। তাই আমাদের স্কিনে ক্রিয়েট হয় স্মুথ এবং গ্লোয়িং লুক।
৪. ওপেন পোরস পরিষ্কার করে এবং ব্রণ, মেছতা,ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস দূর করে:
গ্লাইকলিক অ্যাসিড হল কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর । এর মলিকিউলার ছোট হওয়ার কারণে এটি খুব দ্রুত ত্বকে অবজার্ভ হয় ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ করে,ওপেন পোরস পরিষ্কার করে মিনিমাইজ করে। ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হওয়ার কারণে ব্রন,মেছতা,ব্ল্যাকহেডস ,হোয়াইটহেডস হতে বাধা প্রদান করে।
৫. সান টেন রিমুভ করে ও কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়:
গ্লাইকলিক অ্যাসিড ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। সব সময় রোদে থাকতে থাকতে অনেক সময় আমাদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়ে যায়। গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহারে এই দাগ ছোপ কমে যায়। বয়স ২৫ এর পর ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায় ফলে ত্বকে দাগ ,ফাইন লাইনস,রিংকেলস ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়।
কোলাজেন এমন একটি প্রোটিন যা আমাদের ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায়। গ্লাইকলিক অ্যাসিড আমাদের ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে সহায়তা করে।
৬. ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়:
আমাদের স্কিনের বিভিন্ন এরিয়া যেমন -গলা, কনুই, বগল ও হাঁটুতে কালো আভা বা হাইপারপিগমেন্টেশন থাকে। কোন কিছুতেই কালো দাগ গুলো দূর হয় না। এসব স্থানে নিয়মিত গ্লাইকোলিক এসিড ব্যবহার করলে কালো আভা বা হাইপারপিগমেন্টেশন ফেইড হয়ে যাবে।
গ্লাইকলিক অ্যাসিড কিভাবে ব্যবহার করব-
বাজারে গ্লাইকলিক এসিড সমৃদ্ধ লোশন, ক্রিম ,টোনার, সিরাম ও ফেসওয়াস পাওয়া যায়। সব ধরনের ত্বকে গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেনসিটিভ ও ড্রাই স্কিনে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে ব্যবহার করতে হবে।
গ্লাইকলিক এসিড সমৃদ্ধ লোশন, ক্রিম ও সিরাম ইত্যাদি রাতে ব্যবহার করলে ভালো হয়। কারণ এটি ব্যবহার করলে ত্বক সান সেনসিটিভ হয়ে যায়। গ্লাইকলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহারের পর অবশ্যই সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন।
সতর্কতা:
- গ্লাইকলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট যখন আপনার রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিনে ইনক্লুড করবেন তখন অবশ্যই সপ্তাহের সাত দিন এই প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না, সর্বোচ্চ হলে সপ্তাহে তিন – চার দিন ব্যবহার করবেন।
- গ্লাইকলিক এসিড প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যবহার করলে ত্বক ড্রাই ও ইরিটেটেড হবে।
- টিনেজ বয়সে গ্লাইকলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- এটি ব্যবহারের পর অবশ্যই সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
- গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট রাতে ব্যবহার করাই ভালো।
- গ্লাইকলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহারের পর সরাসরি সূর্যের আলোতে যাবেন না এতে ত্বকে লাল ভাব ও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
Well done