অয়েলি ত্বকের যত্নে লেবুর ব্যবহার।
সবার ত্বকের ধরন একরকম নয়। ত্বকের ধরন বিভিন্ন টাইপের হয় যেমন- শুষ্ক,অয়েলি, কম্বিনেশন ও সেনসেটিভ। এর মধ্যে অয়েলি ত্বকের যত্ন নেওয়া অন্যান্য স্কিন টাইপের তুলনায় বেশ কষ্টকর। কারন অয়েলি ত্বকে অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হয়, যার ফলে ত্বক সব সময় চিটচিটে থাকে এবং ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস ও ওপেন পোরসের প্রবলেম প্রায় সারাবছরই লেগে থাকে।
ত্বকের এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও কার্যকর কোনো সমাধান মেলে না উল্টো ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। এমন অবস্থায় প্রাকৃতিক উপাদানই শেষ ভরসা। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার আজকাল অনেক বেশি জনপ্রিয়। অয়েলি স্কিনের জন্য লেবু হতে পারে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর সমাধান।
লেবু
লেবুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাসিড (সাইট্রিক অ্যাসিড), যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষন করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে করে তোলে পরিষ্কার ও গ্লোয়িং। এছাড়াও, এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দাগছোপ হালকা করে , পোরস ছোট করে এবং ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে।
চলুন আজকের ফিচারে অয়েলি স্কিনের যত্ন নিতে লেবুর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।
অয়েলি স্কিনের যত্নে লেবু কিভাবে ব্যবহার করব?
বিশেষ করে গরমের দিনে অয়েলি স্কিন খুব দ্রুত ঘেমে কালচে ও বিবর্ণ হয়ে যায়। কাজ কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে বাইরে বের হলে ত্বকের অবস্থা একদম নাজেহাল হয়। এমন অবস্থায় ত্বকে ইনস্ট্যান্ট গ্লো আনতে লেবুর রস সরাসরি কিংবা টোনার তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন। আবার ত্বকে অনেক বেশি ব্রণ ও ওপেন পোরসের সমস্যা থাকলে সপ্তাহে ১-২ বার লেবুর ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করূন।
লেবুর রস:
এক্ষেত্রে একটি বাটিতে ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ পানি মিশিয়ে কটন প্যাড কিংবা তুলো দিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ২ বারের বেশি এপ্লাই করবেন না।
লেবুর ফেসপ্যাক:
লেবু দিয়ে অনেক রকমের ফেসপ্যাক বানানো যায়, এরমধ্যে থেকে লেবুর কিছু ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল।
লেবু ও মধুর ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। মিশ্রণটি ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হয় ও তেল কমায়।
লেবু ও বেসনের ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ বেসন , ১ চা চামচ লেবুর রস ও পেস্ট তৈরি করার প্রয়োজনে সামান্য পানি নিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ও ত্বককে উজ্জ্বল করে।
লেবু ও দই ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ লেবুর রস
মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ব্রণ প্রতিরোধ করে। এই ফেসপ্যাকটি অয়েলি ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর।
লেবু ও ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ১ টি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে এটাকে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন এবার এর সাথে যোগ করুন ১ চা চামচ লেবুর রস।
মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট পর এটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে পুরো মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বকের রোমছিদ্র সংকুচিত হবে , স্কিন টাইট হবে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
অয়েলি ত্বকের জন্য লেবুর কিছু ফেসপ্যাক ও লেবু সরাসরি কিভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত জেনেছেন। তবে এই পদ্ধতি গুলো সপ্তাহে ১-২ বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না নয়তো ত্বকে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন-ত্বক লালচে হওয়া, শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও জ্বালাপোড়া বা চুলকানির মতো সমস্যা হওয়া। এবার চলুন লেবু কিভাবে টোনারের মত করে রেগুলার ব্যবহার করা যায় সে পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
লেবুর টোনার:
একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলের তিন ভাগ অংশের এক ভাগ অংশে লেবুর রস ও বাকি দুই ভাগ অংশে গোলাপজল নিয়ে বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। মনে রাখবেন লেবুর পরিমাণ কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগ থাকবে । এবার এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে সাত দিন টোনার হিসেবে রেগুলার ব্যবহার করতে পারবেন। বাইরে থেকে এসে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে পরিষ্কার মুখে কটন প্যাডের সাহায্যে মুখে লাগিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
এই তো জেনে নিলাম অয়েলি স্কিনের যত্ন নিতে লেবু কিভাবে ব্যবহার করব সে সম্পর্কে। আপনার স্কিন টাইপ যদি অয়েলি হয়ে থাকে তাহলে আজকের ফিচারটি আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে।