শুষ্ক ত্বকের যত্নে নারকেল দুধের উপকারিতা।
শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব ঋতুতেই ত্বকের যত্ন নিতে হবে সমানভাবে। এরমধ্যে ত্বকের ধরন যদি হয় শুষ্ক তবে তো কথাই নেই। শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে প্রয়োজন বাড়তি পুষ্টির যোগান। শুষ্ক ত্বক নিয়ে এমনিতেই চিন্তার শেষ নেই। কারণ শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করতে হয় ব্যালেন্সড হাইজিন প্রোডাক্ট নয়তো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে যেমন – র্যাশ, লালচে ভাব , ফাটা দাগ, ত্বক নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, ত্বকে টানটান অনুভব করা ও উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া। তাই যাদের শুষ্ক ত্বক তারা , রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার করলে , অনেক বেটার রেজাল্ট পাবেন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য সুইটেবল এমনই এক প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে নারকেলের দুধ।
নারকেল দুধের উপকারিতা
নারকেলের দুধ ব্যবহার করে কিভাবে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় সে তথ্য নিয়েই আজকের ফিচার সাজানো হয়েছে। চলুন জেনে নেই।
নারকেলের দুধ
নারকেলের দুধে রয়েছে প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড- (লরিক অ্যাসিড,ক্যাপ্রিক অ্যাসিড) , ভিটামিন ই , অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট , মিনারেলস ও অ্যামিনো অ্যাসিড। যা ত্বককে গভীর থেকে হাইড্রেটেড রাখে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।
নারকেলের দুধ কেন শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী
শুষ্ক ত্বকের বৈশিষ্ট্য হলো- ত্বকে আদ্রতা কম থাকা, ত্বকের টেক্সচার খসখসে থাকা, ত্বক টানটান হওয়া ও অতিরিক্ত শুষ্কতায় চুলকানি বা র্যাশ হওয়া। এসব সমস্যা সমাধানে নারকেলের দুধ খুবই কার্যকর। সাপ্তাহিক স্কিনকেয়ার রুটিনে সরাসরি নারকেলের দুধ কিংবা ফেসপ্যাক বানিয়ে এপ্লাই করলে ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের টানভাব ও চুলকানি কমে,ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে কোমল হয় ,রোদে পোড়া দাগ কমে এবং ত্বকের রুক্ষতা ও খসখসে ভাব দূর হয়।
নারকেলের দুধ তৈরির পদ্ধতি
বর্তমান বাজারে নারকেলের দুধ বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায় যেমন : টিন/ক্যান আকারে,পাউডার ফর্মে,পাউচ বা প্যাকেটজাত আকারে ও Organic বা Cold-pressed নারকেল দুধ আকারে পাওয়া যায়। এই সবগুলো ফর্মের মধ্যে Organic বা Cold-pressed নারকেল দুধ ও ঘরে তৈরি নারকেলের দুধ ত্বকের যত্নের জন্য বেশি কার্যকর। চলূন ঘরে বসে কিভাবে নারকেলের দুধ তৈরি করবেন সেই পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
পদ্ধতি:
প্রথমে ১টি পাকা নারকেল কুরিয়ে বা ছোট ছোট টুকরো করে একটি পাত্রে রাখুন। এবার এক কাপ পরিমাণ নারকেলের জন্য এক কাপ পরিমাণ কুসুম গরম পানি নিয়ে ব্লেন্ডার জারে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। নারকেল যতক্ষণ না দুধের মতো তরল আকারের হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন। ভালোভাবে ব্লেন্ড হয়ে গেলে মিশ্রণটি একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে ছেকে নিন। ছাকার পর যে পাতলা সাদা তরল পাবেন সেটাই নারকেলের দুধ। এই দুধটি ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
ঘরে বসে কিভাবে নারকেলের দুধ তৈরি করবেন সে পদ্ধতি সম্পর্কে তো জানলাম । এবার চলুন শুষ্ক ত্বকের যত্নে নারকেলের দুধ দিয়ে কিভাবে ফেসপ্যাক বানানো যায় সে সম্পর্কে জেনে নিই।
নারকেল দুধ ও মধুর ফেসপ্যাক:
নারকেল ও মধুর ফেসপ্যাকটি শুষ্ক ত্বকের জন্য একটি হাইড্রেটিং সমাধান। মধুতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং গুনাগুণ ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ। এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করতে একটি বাটিতে ২ চা চামচ নারকেলের দুধ ও ১ চা চামচ খাঁটি মধু নিতে হবে। এবার সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বকে হাইড্রেশন প্রোভাইড হবে ও কোমল হবে।
নারকেল দুধ ও ওটমিলের স্ক্রাবিং ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ২ চা চামচ নারকেলের দুধ ও ১ চা চামচ গুঁড়া করা ওটস নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট আলতোভাবে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ও ত্বককে মসৃণ করে।
নারকেল দুধ ও পাকা কলার ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে একটি পাকা কলা নিয়ে ভালোভাবে ম্যাশ করে নিন এবার এর সাথে যোগ করুন ১ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ। কলা ও নারকেল দুধ একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যাবহারে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়, নরম হয় ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
নারকেল দুধ ও অ্যালোভেরা জেলের ফেসপ্যাক:
একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ নারকেল দুধ ও ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বকে হাইড্রেশন প্রোভাইড হবে, ত্বকের রুক্ষতা কমবে ও ত্বকে একটা সতেজ অনুভূতির ফিল হবে ।
আমরা অনেকেই নারকেলের দুধকে শুধু খাবার হিসেবে জানি। কিন্তু এটি খাবারের পাশাপাশি ত্বকের যত্নের জন্যও একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপাদান। ফেসপ্যাক হিসেবে কিংবা সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করলেও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। যখন ত্বকে অনেক বেশি শুষ্কতা ও টানটান অনুভব হবে তখন বাটিতে অল্প পরিমাণ নারকেলের দুধ নিয়ে তুলোর বল বা কটনপ্যাডের সাহায্যে মুখে লাগিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে শুষ্ক ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ, হাইড্রেটেড ও উজ্জ্বল। তাই আজ থেকেই আপনার ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক নারকেলের দুধ ব্যবহার শুরু করুন।