ত্বকের যত্ন

ত্বকের যত্নে খেজুরের উপকারিতা ও ব্যবহার।

ত্বকের যত্নে খেজুরের উপকারিতা ও ব্যবহার

খেজুরকে আমরা সবাই পুষ্টিকর একটি মিষ্টি ফল হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, ত্বকের যত্নেও অসাধারণ ভূমিকা রাখে। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ ও তারুণ্যদীপ্ত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত খাবার ডায়েটে খেজুর রাখার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও খেজুর ব্যবহার করলে মিলতে পারে একাধিক বেনিফিট । চলুন আজকের ফিচারে আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ এবং ত্বকের যত্নে এর কার্যকর ব্যবহারের সহজ উপায়গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

খেজুরের পুষ্টিগুণ –

খেজুর হলো একটি পুষ্টিকর ফল যা নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ , শক্তিদায়ক উপাদান , ডায়েটারি ফাইবার , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আমিষ জাতীয় উপাদানে ভরপুর। খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যেমন-গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ। এই উপাদানটি শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে ও ফলিক এসিড যা ত্বক,চোখ,কোষ ও ব্রেন ফাংশনের সার্বিক উন্নয়ন সাধনে সাহায্য করে। আরো রয়েছে আয়রন ,ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, ফেনলিক অ্যাসিড) যা শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ত্বকের বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে। তাই তো খেজুরকে বলা হয় পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি আদর্শ প্রাকৃতিক উপাদান।

পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি ত্বকের যত্নেও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। ত্বকের যত্নে খেজুরের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। খেজুর ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। যেমন ফেসপ্যাক ,ফেস স্ক্রাব, এক্সফোলিয়েলটিং স্ক্রাব ও ফেস মাস্ক তৈরি করে।

ত্বকের যত্নে খেজুর

প্রাচীনকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, বার্ধক্য রোধে ও ত্বকের গভীর পরিচর্যায় খেজুরের ফেসপ্যাক ব্যবহার করা হতো। এবার,চলুন ত্বকের যত্নে খেজুর কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে জেনে নিই।

খেজুরের ফেসপ্যাক:

এই ফেসপ্যাক তৈরি করতে আমাদের লাগবে ৩–৪টি খেজুর ও ১ চামচ দুধ। ফেসপ্যাক তৈরি করার প্রয়োজনীয় খেজুরগুলো রাতের বেলায় দুধের মধ্যে পুরো রাত অথবা তিন থেকে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এবার এটি একসঙ্গে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন, এটি ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হবে।

এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব:

যারা হালকা ও মাইল্ড উপাদান ব্যবহার করে ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে চান তাদের জন্য খেজুর হতে পারে বেস্ট একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এই এক্সফোলিয়েলটিং স্ক্রাব তৈরি করতে ৩-৪ টি ভেজানো খেজুর পেস্ট করে এর সাথ , ১চামচ চিনি ও ১চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে পুরো মুখে রাউন্ড আকারে তিন মিনিট ম্যাসাজ করে দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে ও ত্বক হবে ঝলমলে ও মসৃণ।

চোখের নিচে পড়া কালো দাগ হালকা করতে আই মাস্ক:

চোখের নিচে পড়া কালো দাগ দূর করতে খেজুর খুবই কার্যকর। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে দুটি বীজ ছাড়ানো খেজুরকে এক চামচ ঠান্ডা দুধে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে । এবার এই দুটি উপকরণ একসাথে বেটে অথবা ব্লেন্ড করে চোখের নিচে পাতলা করে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। এই রেসিপিটি নিয়মিত ব্যবহার করলেও সমস্যা নেই। এটি ব্যবহারে চোখের নিচে থাকা কালো দাগ দূর হয় ও ফোলা ভাব কমে ।

অ্যান্টি-এজিং মাস্ক:

খেজুরে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও‌ ফেনলিক নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রোটিন যা ত্বকের বার্ধক্য জনিত সমস্যা রোধ করে ত্বককে দৃঢ় ও টাইট রাখে। এক্ষেত্রে খেজুর দিয়ে অ্যান্টি এজিং মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এটা তৈরি করতে আমাদের লাগবে ৪-৫টি খেজুর,১ চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ১ চামচ গোলাপজল। এবার এই সবগুলো উপকরণ একত্রে মিশিয়ে একটি ফেসমাস্ক তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি পুরো মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে ও ত্বককে করে মসৃণ।

রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন মেইনটেইন করার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুইবার খেজুরের ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক দ্রুত সুন্দর হয়ে উঠবে। এটি ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করে ত্বকে নতুন আভা যোগ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *