ঘাড়ের কালো দাগ দূর করার উপায়।
গলায় ও ঘাড়ে কালো দাগ একটি কমন সমস্যা। বিভিন্ন কারনে এই সমস্যাটি হয় যেমন-যারা স্বাস্থ্যবান তাদের ক্ষেত্রে ওজন বেশির কারণে হয়, জিনগত কারণে , ময়লা জমে,শারীরিক জটিলতা (ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, পিসিওএস ও হাইপারথাইরয়েডিজম) , সানবার্ন ও সোনা রূপা কিংবা অন্যান্য ধাতুর মোটা চেইন দীর্ঘদিন গলায় পড়ে থাকলেও ঘাড়ে কালো দাগ পরে।
মুখের তুলনায় ঘাড়ের রং বেশি কালো হলে সৌন্দর্যের ব্যাখ্যায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই মুখের ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ঘাড়ের ত্বকেরও পরিচর্যা নিতে হবে। সঠিক উপায়ে যত্ন নিলে ঘাড়ের কালো দাগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘাড়ের কালো দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকরী কিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে।
১. লেবু
ত্বকের যত্নে লেবু হলো একটি প্রাকৃতিক ব্লিচিং। এটি ত্বকের কালো দাগ ও পিগমেন্টেশন দূর করতে খুবই কার্যকর। তাই আশা করি,ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতেও লেবুর রস কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে এক টুকরো লেবু নিয়ে সরাসরি ঘাড়ে ঘষে কিংবা অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।
লেবু ও মধু:
লেবু ত্বককে ব্লিচ করে দাগ দূর করে এবং মধু ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। এই দুটি উপাদান একটি বাটিতে ১ চা চামচ পরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘাড়ে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই রেসিপিটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করুন।
২. হলুদ
বাঙালি রান্নার প্রধান একটি উপাদান হলো হলুদ। রান্নায় রং ও স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রূপচর্চার কাজেও ব্যবহার হয়ে আসছে বহু শতাব্দী ধরে। এতে রয়েছে কারকিউমিন। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হাইপারপিগমেন্টেশন এবং কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। চলুন হলুদ ব্যবহার করে কিভাবে ঘাড়ের কালো দাগ দূর করবেন সেই পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে আসি।
বেসন, দুধ ও হলুদ:
একটি পাত্রে ২ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ কাঁচা দুধ ও আধা চামচ পরিমাণ হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই রেমিডিটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। এটা ব্যবহারে ঘাড়ের ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হবে।
৩. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও শীতলীকরণ বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের রোদে পোড়া দাগ এবং হাইপারপিগমেন্টেশন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন, এনজাইম,অ্যালোসিন এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ যা ত্বককে কালো করার জন্য দায়ী এনজাইমকে বাধা দেয় পাশাপাশি কালো দাগ হালকা করতেও সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা ও গোলাপজল:
একটি পাত্রে পরিমাণ মতো আলোভেরা জেল ও গোলাপজল মিশিয়ে ঘাড়ে ম্যাসাজ করুন। এটি ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি প্রতিদিন রাতেও ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে ত্বকে সতেজতা অনুভব করবেন ও ঘাড়ের কালো দাগও হালকা হবে।
৪. দই
দইয়ে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং মসৃণ করে।
দই ও চালের গুঁড়োর স্ক্রাব:
একটি বাটিতে দুই চামচ দই ও এক চামচ চালের গুড়া নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন। এবার এটিকে ঘাড়ে লাগিয়ে ৫ মিনিট হালকা ম্যাসাজ করে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ১০ মিনিট পর স্ক্রাবটি ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাবটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ঘাড়ের কালো দাগ হালকা হবে।
ঘাড়ের কালো দাগ যদি শারীরিক জটিলতা (ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স) এর কারনে হয় তবে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
অতিরিক্ত টিপস
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন । পানি ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভিতর থেকে উন্নত করে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- বাইরে কিংবা রোদে বের হলে সানস্ক্রিন এপ্লাই করে বের হবেন ও সূর্যের কড়া রোদ থেকে বাঁচতে স্কার্ফ বা ছাতা ব্যবহার করুন।
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এরিয়ে চলুন।
- প্রতিদিন ব্যায়াম করুন ও যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন।
ঘাড়ের কালো দাগ দূর করা অসম্ভব কিছু নয়। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে, ঘরে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ধৈর্য সহকারে নিয়মিত পরিচর্যা করলেই ঘাড়ের দাগ দূর হবে।