রূপচর্চায় কফি পাউডারের উপকারিতা ও ব্যবহার জানুন।
দিনের শুরুতে এক কাপ কফি পান করলে, শরীর ও মন দুটোই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। রেগুলার লাইফস্টাইলে রোমাঞ্চকর সময় কাটাতে কিংবা ক্লান্তি ভাব দূর করতে এক কাপ কফিই যথেষ্ট। কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন, আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা শরীরের ক্লান্তিভাব নিমিষেই দূর করে, শরীরকে সতেজ করে। সচরাচর কফি পানীয় হিসেবে বেশি ব্যাবহৃত হলেও এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলির কারনে এটি রূপচর্চায়ও বেশ ব্যাবহৃত হয়। আজকের ফিচারে আমরা কফি পাউডার ব্যবহার করে কীভাবে রূপচর্চা করা যায়,এ নিয়ে আলোচনা করব, চলুন জেনে নেই।
ত্বকের যত্নে কফি পাউডার
কফিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন এবং অন্যান্য সক্রিয় যৌগ যা ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। কফিতে রয়েছে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলের প্রভাব থেকে রক্ষা করে, বলি রেখা এবং অন্যান্য এজিং সাইন্স কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও কফি ব্যবহারে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ডার্ক সার্কেল ও আই পাফিনেস দূর হয়। বিশেষজ্ঞরা আরো জানান,কফি পাউডার ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ রিমুভ হয় ও ব্রণের প্রদাহ অনেকটা কমে যায়। ত্বকের যত্নে কফি পাউডার বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায় যেমন-কফির ফেসপ্যাক,কফির স্ক্রাব,কফির ময়েশ্চারাইজার ও কফির আই ক্রিম ইত্যাদি। চলুন এবার এগুলো তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।
কফি দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি
কফি দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বক হয় উজ্জ্বল, মসৃণ ও প্রাণবন্ত । এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ও ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। চলুন কফি দিয়ে কিছু ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
- কফি ও মধুর ফেসপ্যাক:
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফির গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ চা চামচ দই অথবা লেবুর রস নিয়ে একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।এবার এই মিশ্রণটি মুখে ও গলায় সমানভাবে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট শুকাতে দিন। এবার একটি কাপর হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে আলতো হাতে মুখ মুছে নিন। পরবর্তীতে অবশিষ্ট অংশ স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করলেই উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাবেন। - কফি ও অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক :
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফি গুঁড়ো ,১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ১ চা চামচ কাঁচা দুধ নিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি চোখ ও মুখে এরিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল ও ফোলাভাব কমে যাবে ও ত্বক টানটান হবে। - কফি ও হলুদের ফেসপ্যাক :
এই ফেসপ্যাকটি ব্রনপ্রবন ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর।এটি তৈরি করতে আমাদের লাগবে ১ টেবিল চামচ কফি পাউডার ,½ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও ১ চা চামচ মুলতানি মাটি অথবা বা মধু এবার এই সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে পুরো মুখে লাগিয়ে হালকা হাতে স্ক্রাব করে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হবে।
কফি দিয়ে স্ক্রাব তৈরির পদ্ধতি
কফি ব্যবহার করে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ। চলুন কফি দিয়ে স্ক্রাব তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেই।
- কফি ও দইয়ের স্ক্রাব:
স্ক্রাব তৈরিতে ইনস্ট্যান্ট কফির তুলনায় কফি বিন ব্যবহার করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ কফি বিন গ্ৰেন্ড করে এর গুঁড়ো নিন এবার এর সাথে যোগ করূন ১ টেবিল চামচ মধু ,১ টেবিল চামচ দই ও ১ চা চামচ লেবুর রস। এবার সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। মিশ্রণটি মুখে ও গলায় সমানভাবে লাগিয়ে গোলাকার মোশনে ২-৩ মিনিট পুরো মুখে স্ক্রাব করে ১০-১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাব ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে,ডার্ক সার্কেল রিমুভ হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। এই স্ক্রাবটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাবেন। - কফি ও ওটমিল স্ক্রাব:
এই স্ক্রাব তৈরি করতে একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ কফি গুঁড়ো ,১ টেবিল চামচ ওটমিল পাউডার ও ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেল বা মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে ও গলায় আলতো হাতে ম্যাসাজ করে পুরো মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে ।
কফি দিয়ে ময়শ্চারাইজার তৈরির পদ্ধতি
সাশ্রয়ী খরচে ঘরেই যদি তৈরি করা যায় প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, তবে বাইরের রাসায়নিক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের দরকার কি? এমন কথা অনেকেই শুনেছেন তবে ঘরে তৈরি ময়শ্চারাইজার অনেকের ত্বকে এডজাস্ট করে না। তাই ভরসা ভালো ব্র্যান্ডের মশ্চারাইজার কে ঘিরে। তবে পার্লারে না গিয়ে সপ্তাহে একবার ঘরে তৈরি ময়শ্চারাইজার বা বডি বাটার তৈরি করে ব্যবহার করলে ভালই ফলাফল পাওয়া যায়। চলুন কফি দিয়ে ময়শ্চারাইজার বা বডি বাটার তৈরির রেসিপি জেনে নেই।
- কফি দিয়ে ময়েশ্চারাইজার/বডি বাটার রেসিপি:
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ কফি বিন গ্রেন্ড করে এর গুঁড়া নিন এবার এর সাথে অ্যাড করুন ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল/অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল। এবার এই সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি থিক পেস্ট তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন পেস্টটি যেন খুব বেশি ঘন ও পাতলা না হয় । এবার মুখ ও শরীর পরিষ্কার করে ত্বকে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন। এই বডি বাটার রেসিপিটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ত্বক হবে মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল।
কফি দিয়ে আই ক্রিম তৈরি
যারা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রূপচর্চা করতে পছন্দ করেন তারা এই রেসিপি ফলো করে চোখের নিচে পড়া ডার্ক সার্কেল সহজেই দূর করতে পারবেন।
আই ক্রিম:
একটি বাটিতে অথবা কাঁচের বোতলে ১ টেবিল চামচ কফি গুঁড়ো ,১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল , ১ চা চামচ নারিকেল তেল/অলিভ অয়েল ,১ চা চামচ মধু ও ২-৩ ফোঁটা ভিটামিন ই অয়েল নিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন। এবার এটি ফ্রিজে রেখে এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ব্যবহারের আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নেবেন। এবার কাঁচের বোতল থেকে আঙুলের ডগায় অল্প পরিমাণ ক্রিম নিয়ে আন্ডার আই এরিয়াতে ট্যাপ করে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ভেজা কটন প্যাড বা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে ফেলুন। এই আই ক্রিমটি রাতে ব্যবহার করবেন এবং দিনের বেলায় ত্বকে অবশ্যই SPF যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
এইতো জেনে নিলাম রূপচর্চায় কফি পাউডারের ব্যবহার সম্পর্কে। আশাকরি,যারা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে পছন্দ করেন তাদের কাছে আজকের ফিচারটি অবশ্যই ভালো লাগবে। ত্বকের যত্ন নিতে প্রয়োজনীয় দেশি-বিদেশি সব অরিজিনাল প্রোডাক্ট পাবেন Hretu’s World ওয়েবসাইটে।